হুমায়ুন স্যার থাকলে খুশিতে কাঁদতেন–এজাজ

নন্দিত কথাসাহিত্যিক এবং নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের নির্মিত নাটক-সিনেমায় অভিনয় করে ভক্তদের কাছের মানুষ হয়ে উঠেছেন ডা. এজাজ, ফারুক আহমেদ ও স্বাধীন খসরু। এই তিনজনের একসাথে পথচলা শুরু হয়েছিল ‘তারা তিনজন’ নামের একটি নাটক দিয়ে। কাজটির জনপ্রিয়তা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই।

কিছুদিন হলো এই তিনজনকে নিয়ে ‘ওরা তিনজন’ শিরোনামের একটি প্রজেক্ট বানিয়েছেন হুমায়ুন আহমেদ পুত্র নুহাশ হুমায়ূন। এই প্রথম হুমায়ূনপুত্রের নির্দেশনায় ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছেন তারা। নুহাশের সঙ্গে কাজের সেই অভিজ্ঞতা দেশের একটি সংবাদমাধ্যমের সাথে ব্যক্ত করেছেন অভিনেতা এজাজ।

‘ওরা তিনজন’ প্রজেক্টের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ব্যাপারে অভিনেতা বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হয়েছিল। প্রথমে বলা হলো একটি বিজ্ঞাপনের কাজ। একটু দীর্ঘ বিজ্ঞাপন। ‘তারা তিনজন’কে নিয়ে। অর্থাৎ আমি, ফারুক আর খসরু। শুরুতে এত পুলকিত হইনি। কারণ ‘তারা তিনজন’কে অনুকরণ করে অনেক কাজ হয়েছে। কিন্তু হুমায়ুন স্যার যেটা বানিয়েছিলেন সেরকম কিছুই হয়নি। তাই স্বাভাবিকভাবে নিয়েছিলাম। শেষে জানলাম এটি বানাবেন নুহাশ হুমায়ূন। এটা জানার পর অত্যন্ত অত্যন্ত ও অত্যন্ত পুলকিত হয়েছি।’’

নুহাশের সঙ্গে কাজের মধুরতার বিষয়ে এজাজ বলেন, ‘হুমায়ুন স্যারের নাটক-সিনেমায় অভিনয় করে যে রকম আনন্দ পেতাম সেরকম আনন্দ পেয়েছি। কারণ আমরা জানি নুহাশ কত ভালো কাজ করছে! কত বিখ্যাত হয়ে গেছে! এটা সব সময় আনন্দ দেয়। কারণ স্যারের ছেলে। স্যারের ছেলে মানে আমাদের ছেলে। তার কাজের খবর সব সময় পড়ি, জানি এবং অত্যন্ত আনন্দিত হই।’

যদিও প্রথমে ছিল সংশয় উল্লেখ করে বলেন, ‘শুরুতে আতঙ্কে ছিলাম। কেননা স্যার আমাদের অভিনয় পছন্দ করতেন তার ছেলে নাও করতে পারেন। সব নির্মাতা তো সব শিল্পীকে একইভাবে নেন না। এই ভয়টা মনের মধ্যে ছিল। তবে শুটিং শুরুর পর দেখতাম আমাদের অভিনয় দেখে নুহাশ আনন্দিত হতো। খুশিতে তালি দিত, চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে যেত। একসময় বলল, আপনাদের তিনজনকে নিয়ে আমাকে আরও বড় কিছু করতে হবে। তখন আরও ভালো লাগল। কারণ বিখ্যাত ও মেধাবী পরিচালক যখন একজন অভিনেতার অভিনয় পছন্দ করেন তখন ওই অভিনেতার জন্য তা অনেক বড় পাওয়া।’

প্রথম কাজে নুহাশের সঙ্গে স্মরণীয় বিষয় সম্পর্কে বলেন, ‘নুহাশ পুরো ইউনিট নিয়ে সকাল সাতটায় চেয়ারে বসে যায়। কাজ শুরু করে দেয়। বাংলাদেশে এর আগে এরকম দেখিনি। তার সঙ্গে কাজের পাঁচদিন আমাদের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কাজটি করে দর্শকের প্রশংসা পাচ্ছি। এটা যে পাব তা শুটিংয়ের সময় বুঝেছিলাম’।

ঘোরের মধ্যে ছিলাম উল্লেখ করে এজাজ জানান, ‘একেবারে স্যারের (হুমায়ূন আহমেদ) মতো কাজ করছিল নুহাশ। শুটিংয়ের সময় হুট করে স্যার ঢুকে কোনো একটা সংলাপ পাল্টে দিতেন, অভিনয়ের কোনো অংশ বদলে দিতেন। আমরা অবাক হয়ে যেতাম। নুহাশের ক্ষেত্রেও এটা লক্ষ্য করেছি। শুটিংও হয়েছে সেই চিরচেনা নুহাশ পল্লীতে। সে কারণে পাঁচটা দিন ঘোরের মধ্যে ছিলাম। স্যার বহুদিন আগে চলে গেছেন। কিন্তু আমাদের মনে হয়েছে ১৫-১৬ বছর পর আবার স্যারের সঙ্গে কাজ করছি। ঘোরের মধ্যে ছিলাম। একবারও মনে হয়নি স্যার নেই। মনে হয়েছে তিনি বেঁচে আছেন। আমরা তার জগতেই আছি।’

ডা. এজাজের ভাষ্যে, ‘স্যার থাকলে নুহাশের কাজ দেখে খুশিতে কাঁদতেন। আমি এখন কথা বলছি আমারও কান্না পাচ্ছে। একে আনন্দ অশ্রু বলি। স্যারের চোখেও সেই অশ্রু দেখা যেত। কেননা সন্তানের সাফল্য বাবার কাছে ভীষণ আনন্দের।’

নুহাশকে নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এজাজ। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ছেলে এত ভালো কাজ করছে ভাবাই যায় না। বাংলাদেশে একদিন অস্কার আনবে নুহাশ। কথাটা বাড়িয়ে বললাম না। এটা আমার স্বপ্ন ও প্রত্যাশা। আমি আমার ছেলের (নুহাশ হুমায়ূন) জন্য এরকম স্বপ্ন দেখবই।’

নিজ গুরু হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে কাজের স্মৃতিচারণা করে অভিনেতা বলেন, ‘স্যারের কাজের সময় উচ্ছ্বসিত থাকতাম। তার প্রতিটি নাটক-সিনেমা আমার জীবনের একেকটি মাইলস্টোন। স্যারের নাটকে থাকাটা আমার জন্য বিরাট আনন্দের ছিল। এগুলোকে আমি বিশাল অর্জন মনে করতাম। এখন পর্যন্ত সেগুলো আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন। ওই সময়টা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। আনন্দ ও সুখময় সময় ছিল।’
প্রসঙ্গত,বর্তমানে ডা. এজাজ ব্যস্ত খন্ড ও ধারাবাহিক নাটক নিয়ে। এরমধ্যে কে এম সোহাগের ‘দেনা পাওনা’ এবং সৈয়দ শাকিলের ‘বোকা পরিবার’ উল্লেখযোগ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *