লু/ট করা ২৪ গরু মিলল বিএনপি নেতার বাড়িতে

নেত্রকোনার মদনে হাওরের সড়ক থেকে ২৪টি গরু লুটের ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতার বাড়ি থেকে লুটের গরুগুলো উদ্ধার করেছে। পরে সেগুলোকে মালিকের হাতে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (১২ মার্চ) সন্ধ্যায় মদন থানার ওসি নাঈম মুহাম্মদ নাহিদ হাসান কালবেলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, গতকাল (মঙ্গলবার) বিকেলে মদন উপজেলায় গোবিন্দশ্রী গ্রামের সড়ক থেকে গরুগুলো লুটের ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, খালিয়জুরী থেকে এক নারী পিকআপে করে তার ১৯টি গরু নিয়ে আটপাড়ার দিকে যাচ্ছিলেন। মঙ্গলবার বিকেলে গোবিন্দশ্রী সড়কে পৌঁছলে কয়েকজন ব্যক্তি পিকআপ থামিয়ে জোরপূর্বক গরুগুলো নিয়ে যায়। একইদিন বিকেলে অপর একব্যক্তি ৫টি গরু পিকআপে করে খালিয়াজুরি থেকে নান্দাইল নিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে গোবিন্দশ্রী থেকে সেগুলোও লুট হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা স্থানীয়দের নিয়ে উদ্ধার অভিযানে নামে।

পরে রাতে গোবিন্দশ্রী ইউনিয়ন বিএনপির দপ্তর সম্পাদক মাহমুদুল হাসান মান্নার বাড়ি থেকে ১৯টি গরু উদ্ধার করা হয়। বাকি গরুগুলোও বিএনপির অন্যান্য নেতাকর্মীদের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়।

গরুগুলো উদ্ধারে যৌথবাহিনীকে সহায়তা করেন স্থানীয় জামায়াতের রোকন সদস্য দিলোয়ার হোসেন, জামায়াত কর্মী হাফেজ জাকারিয়া, রুমান মিয়া, আবুল বাশার, তৈয়মুল আলম বাপ্পি, গোবিন্দশ্রী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সম্রাট, বিএনপি নেতা আমজাদ হোসেন সুজাত, যুবদল নেতা জুসেফ আহমদ ভূট্টো ও ছাত্রদল নেতা আল-রাব্বী রবিন।

এ বিষয়ে গোবিন্দশ্রী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সম্রাট বলেন, কয়েকদিন আগে খালিয়াজুরীতে যে সংঘাত হয়েছিল তার জেরে এ ঘটনা ঘটতে পারে। পরে গরুগুলো দপ্তর সম্পাদক মান্নার বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। সেগুলো তার জিম্মায় ছিল।
অভিযানে সহযোগিতাকারী স্থানীয় জামায়াতের রোকন দিলোয়ার হোসেন বলেন, লুট হওয়া গরুগুলোর মধ্যে ১৯টি গরু বিএনপি নেতা মান্নার বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। বাকিগুলো অন্যান্য নেতাকর্মীদের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকালে অনেক মানুষ হামলা করার চেষ্টা করেছিল।

অভিযানে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, লুট হওয়া ১৯ গরুর মধ্যে মোটাতাজা ৪টি অন্যত্র সরিয়ে ১৫টি ফেরত দিতে চেয়েছিল। বাকি ৪টির খবর পাওয়া যায় অন্যদের বাড়িতে। সেগুলো উদ্ধারে গেলে পুলিশসহ সহায়তাকারীদের ওপর হামলা চালাতে অসংখ্য মানুষ বেরিয়ে আসে। কোনোরকম প্রাণ নিয়ে ফিরে এসেছি। শেষে সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয় ও বাকি গরুগুলো উদ্ধার করে। রাতটা পার হলে আর গরুগুলো পাওয়া যেত না।

অভিযুক্ত গোবিন্দশ্রী ইউনিয়ন বিএনপির দপ্তর সম্পাদক মাহমুদুল হাসান মান্না বলেন, ঝামেলা হওয়ার ভয়ে গরুর মালিক আমার বাড়িতে তার গরুগুলো রাখার জন্য আশ্রয় চেয়েছিল। আমি সেগুলো নিরাপদে রেখেছি। পরে শুনলাম তিনি আমার আত্মীয় হন। লুটপাটের ঘটনা ঘটেনি।

মদন থানার ওসি নাহিদ হাসান বলেন, হাওরে ঘাস খাওয়াতে ওই নারী তার ১৯টি গরু খালিয়াজুরীতে এক আত্মীয়র বাড়িতে দিয়েছিলেন। সম্প্রতি সংঘর্ষ হওয়ায় ভয়ে গরুগুলো ফেরত নিয়ে যাচ্ছিলেন আটপাড়ায়। পথে গোবিন্দশ্রী এলাকায় পিকআপ থামিয়ে যে যার মতো করে গরুগুলো নিয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, একইদিন অপর এক ব্যক্তি ৫টি গরু কিনে খালিয়াজুরী থেকে নান্দাইল নিয়ে যাচ্ছিলেন। একই এলাকায় পিকআপ থামিয়ে গরুগুলো নিয়ে যায়। পরে খবর পেয়ে সবগুলো গরু উদ্ধার করা হয়।
তবে কার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসব লেখার দরকার নাই। গরু উদ্ধার হয়েছে এটাই লিখেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *