
বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে একটি হলো আওয়ামী লীগ। ১৭ কোটির বেশি জনসংখ্যার বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি সম্প্রতি কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে,
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে দেশ ছাড়তে হয়েছে। শেখ হাসিনার গত ১৫ বছরের শাসনামলে নানা ত্রুটির কথা তুলে ধরে,
আওয়ামী লীগের কিছু প্রবীণ নেতা একটি জাতীয় দৈনিকের সাক্ষাৎকারে তাদের মতামত প্রকাশ করেছেন। সাক্ষাৎকারে নেতারা শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের মতে, শেখ হাসিনা তার সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না এবং যাঁরা
তার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, তাদেরই তার রোষানলের শিকার হতে হয়েছে। এছাড়া, শেখ হাসিনা পরিবার নিয়ে সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না। তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, আওয়ামী লীগকে একটি পরিবারতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলে পরিণত করার জন্য।
শেখ হাসিনার শাসনামলে, দলের অনেক নেতার মতে, যারা তার বিরুদ্ধে সত্য কথা বলেছেন, তারা দলে থাকতে পারেননি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনা স্বৈরাচারি কায়দায় দেশ চালাতে থাকেন,
আর তার সিদ্ধান্তই সবাইকে মেনে নিতে বাধ্য করে। তার পরিবারের সদস্যরা, যেমন- ছোট বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, এবং অন্যান্য আত্মীয়স্বজন,
তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন এবং তাদের জন্য অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে চিহ্নিত অপরাধী, মাফিয়া ও দুর্নীতিবাজদের দলে ভেড়ানোর অভিযোগ উঠেছে।
এক সময়কার আওয়ামী লীগ নেতা এবং গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন মন্তব্য করেছেন যে, আওয়ামী লীগের বর্তমান পরিণতির জন্য শেখ হাসিনাই দায়ী। তিনি ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের অবমূল্যায়ন করেছেন এবং দলে পরিবারতন্ত্র
প্রতিষ্ঠা করেছেন। একইভাবে, বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানও বলেন, শেখ হাসিনা অত্যন্ত দাম্ভিক এবং অহংকারী, এবং তার পরিবারের সদস্যদের জন্য অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে দুর্নীতিবাজ ও অপরাধীদের কাছে টেনেছেন।
১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা দিল্লি থেকে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর তিনি দলের পরীক্ষিত নেতাদের একে একে দূরে সরিয়ে দেন। ৯১ সালের নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর, শেখ হাসিনা ড. কামাল হোসেনসহ অনেক প্রবীণ নেতাকে আওয়ামী লীগ ছেড়ে যেতে বাধ্য করেন।
শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে ২০১৪ সালের ২৪ অক্টোবর আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। একইভাবে, অনেক নেতাকে দলে ভেড়ানো এবং তাদেরকে শেখ হাসিনার আদর্শ অনুযায়ী চলতে বাধ্য করার জন্য আওয়ামী লীগে ভাঙন দেখা গেছে।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা তোফায়েল আহমেদ ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্তসহ অনেককে শেখ হাসিনার ক্রোধের শিকার হতে হয়েছে। তাদের ওপর ব্যাপক চাপ তৈরি করা হয়েছে, এবং বহু নেতা তাকে বিরোধিতা করতে পারেননি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক শামসুল হককে যথাযথ গুরুত্ব না দেওয়ার জন্য শেখ হাসিনাকে সমালোচিত করা হয়।
এছাড়া, শাসনামলে শেখ হাসিনা তার নিজস্ব ও পরিবারের সদস্যদের নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন, কিন্তু জাতীয় নেতাদের নামে তেমন কোনো উদ্যোগ নেননি, যা দলের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।