সরাসরি কাবার ওপর সূর্য, বিরল মহাজাগতিক ঘটনা

একটি বিরল ও গুরুত্বপূর্ণ জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ঘটনার সাক্ষী হলো সৌদি আরবের মক্কা। পবিত্র কাবা শরিফের ঠিক ওপরে অবস্থান করে সূর্য। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) এ ঘটনা ঘটার সময় কাবার আশপাশে ছায়া একেবারেই অদৃশ্য হয়ে যায়, যা পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে সূর্যের দিকে তাকিয়ে নিখুঁত কিবলা নির্ধারণের সুযোগ করে দেয় মুসলিমদের জন্য।

জেদ্দা অ্যাস্ট্রোনমি সোসাইটি এক বিবৃতিতে জানায়, ‘মক্কার আকাশে সূর্য সরাসরি কাবার ঠিক উপরে এসেছে, ফলে চারপাশের ছায়া সম্পূর্ণভাবে মিলে যায়। যেসব জায়গা থেকে সূর্য দেখা সম্ভব, সেখানে দাঁড়িয়ে কেবল সূর্যের দিকে মুখ করলেই কিবলার দিক চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করা যায়।’

এই বিরল ঘটনাটি ঘটে যখন সূর্য দক্ষিণের দিকে গমন করে এবং পৃথিবীর কক্ষপথ অনুযায়ী মক্কার ২১.৪ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ বরাবর অবস্থান নেয়। এই ঘটনাকে ‘সোলার জেনিথ’ (Solar Zenith) বলা হয় এবং এটি প্রতি বছর সাধারণত মে মাসের শেষভাগ ও জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে দু’বার ঘটে।

পৃথিবীর ২৩.৫ ডিগ্রি ঢালু অক্ষ ও সূর্যের গমনপথের কারণে এই সুনির্দিষ্ট সমান্তরালে সূর্যের অবস্থান কাবার ওপর দিয়ে অতিক্রম করে, যা ধর্মীয় দিক থেকে যেমন তাৎপর্যপূর্ণ, তেমনি বৈজ্ঞানিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ।

জেদ্দা অ্যাস্ট্রোনমি সোসাইটির সভাপতি মাজেদ আবু জাহরা জানান, এই সূর্যকেন্দ্রীয়তা মক্কার নামাজের সময়ের সঙ্গে মিলে যায়, যার ফলে এই ঘটনাটি পবিত্রতা ও বিজ্ঞান— উভয় দৃষ্টিকোণ থেকেই গভীর তাৎপর্য বহন করে।

এই মুহূর্তে সূর্যের আলো ঠিক কাবার উপর পড়ে, যার ফলে ছায়া একেবারে নেই হয়ে যায়। ফলে বিশ্বের যে কোনো জায়গা থেকে যেখানে সূর্য দেখা যায়, সেখানে দাঁড়িয়ে শুধু সূর্যের দিকে মুখ করলেই নির্ভুল কিবলার দিকে মুখ করা যায়।

এই জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ঘটনার একটি বড় তাৎপর্য হলো, এটি আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়াই বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের জন্য কিবলা সঠিকভাবে নির্ধারণের সুযোগ করে দেয়। যেসব মুসল্লি কম্পাস বা অ্যাপস ব্যবহার ছাড়াই নামাজ আদায় করতে চান, তাদের জন্য এ এক দুর্লভ মুহূর্ত।

এটি শুধু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, জ্যোতির্বিদদের জন্যও তা বিশেষ গুরুত্ববাহী। কারণ, সূর্যের এই অবস্থানে বায়ুমণ্ডলের প্রতিফলন বা অ্যাটমোসফেরিক রিফ্র্যাকশনের পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়, যা সূর্যের অবস্থান ও আলোর আচরণ বুঝতে সাহায্য করে।
এই পর্যবেক্ষণ থেকে ভবিষ্যতের জলবায়ু, দিন-রাত্রির দৈর্ঘ্য এবং সৌরভিত্তিক ক্যালেন্ডার নিয়ে আরও সূক্ষ্ম গবেষণা চালানো সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *