
আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগসহ অন্তত ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা নজর রাখছি। কেউ যদি অস্থিরতা বা গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এই বৈঠক এবং ৮ আগস্টের বিষয়ে সামাজিক মাধ্যমে নানা ‘হুমকির’ আলোচনা প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তালেবুর রহমান বলেন, ‘আমরা গত একটা বছরে বিভিন্ন সময় দেখেছি, নানা সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিনষ্ট করার জন্য পরিকল্পিতভাবে কার্যক্রম অনেকেই করেছে। এরই প্রেক্ষিতে আমরা সজাগ রয়েছি।’
মামলার তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা ‘প্রিয় স্বদেশ’, ‘বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম’, ‘এফ ৭১ গেরিলা’সহ একাধিক গোপন অনলাইন গ্রুপের সদস্য। এসব প্ল্যাটফর্মে তারা রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র ও সহিংস কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করে আসছিল।
জিজ্ঞাসাবাদে সোহেল রানা ও শামীমা নাসরিন জানিয়েছেন, মেজর সাদিকের পরিকল্পনায় বসুন্ধরার কে বি কনভেনশন সেন্টারের দ্বিতীয় তলায় বৈঠক হয় এবং সেখানে সরকার উৎখাত ও রাজধানীমুখী অভিযানের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, সোহেল রানা ও শম্পাকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য যাচাই করা হয়। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই বৈঠকে অংশ নেওয়া মেজর সাদিকুল হক ওরফে মেজর সাদিককে হেফাজতে নেওয়া হয়।
সূত্র আরও জানায়, এখনও রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীরা চোরাগোপ্তা হামলার পরিকল্পনায় সক্রিয় রয়েছে।
এ বিষয়ে গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, ‘নিষিদ্ধ ঘোষণা কেবল কাগজে-কলমে থেকে গেলে চলবে না। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আত্মগোপনে থেকেই হামলা চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রকাশ্যে চলাফেরা, নতুন করে সংঘবদ্ধ হওয়া এবং সরকারের পক্ষ থেকে কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা না নেওয়া চরম শৈথিল্যের পরিচয়।’ তিনি বলেন, ‘যারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছিল, তাদের প্রকাশ্যে বিচারের আওতায় না আনলে এসব অপতৎপরতা আরও বাড়বে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্তত তিনজন রাজনৈতিক নেতা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অতিরিক্ত নমনীয়তাই নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোকে আবারও সংগঠিত হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। তারা অভিযোগ করেন, এখনো সারাদেশজুড়ে এমন বহু আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মী প্রকাশ্যে চলাফেরা করছেন, যারা গত জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো দৃশ্যমান বিচার কার্যক্রম শুরু হয়নি। এই বিচারহীনতার সংস্কারই তাদের আবারও সংগঠিত হওয়ার সাহস দিচ্ছে।
অন্যদিকে, নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সহিংসতা এবং রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের চেষ্টার প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা এখন দেশের সচেতন নাগরিক সমাজ ও গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর প্রতি সতর্ক ও ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাচ্ছেন।
গত ২৩ জুলাই দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিকে জাতীয় স্বার্থের জায়গায় যেকোনো মূল্যে ঐক্যবদ্ধ থাকাতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক মনে করেন, ‘পুলিশ যেন কোনো দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার না হয়, বরং নিরপেক্ষভাবে অপরাধীদের ধরতে হবে। রাজনীতির আড়ালে কেউ যেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক থাকা জরুরি বলেও জানান তিনি।