
চেনা ওষুধ। তবে এর মধ্যেই যে এমন জাদু লুকিয়ে আছে, তা কে জানত? প্রথম খুঁজে পেলেন ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব ইস্ট অ্যাঙ্গলিয়ার স্কুল অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেসের বিজ্ঞানীরা। সেই দুটি জাদু হচ্ছে— যে ওষুধ ক্যানসার ও ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়, তা এখন যৌবন ধরে রাখার কাজে ব্যবহার হবে। ওষুধ দুটি নির্দিষ্ট মাত্রায় ব্যবহার করা গেলে আয়ু বৃদ্ধি হতে পারে বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।
বার্ধক্যকে ঠেকিয়ে রাখার এই যে অদম্য বাসনা, অদম্য তাড়না, তা থেকেই ‘অ্যান্টি-এজিং’ নিয়ে হুলস্থূল শুরু হয়ে গেছে বিজ্ঞানীমহলে। স্টেম কোষ প্রতিস্থাপন থেকে ক্লোনিং— চিকিৎসা বিজ্ঞানের যত রকম দিক আছে, তার সবকটিই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে। আর এ দুটি ওষুধ আপাতত পশুদের শরীরে প্রয়োগ করে দেখা হয়েছে। মানুষের ওপর প্রয়োগ করার কাজ শুরু হয়েছে। তার ফল এখনো প্রকাশ্যে আনেননি বিজ্ঞানীরা। এর জন্য আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করতেই হবে। আর তা করতে গিয়েই দুটি ওষুধের নাম প্রকাশ্যে এনেছে— র্যাপামাইসিন ও মেটাফরমিন।
র্যাপামাইসিন ক্যানসার প্রতিরোধী ওষুধ। আবার অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সময়েও এর প্রয়োগ হয়। আর মেটামরফিন ডায়াবেটিসের ওষুধ। টাইপ-২ ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় রোগীদের দেওয়া হয়।
এখানে চমক আছে। ওষুধ দুটি নিজ নিজ ক্ষেত্রে কাজ করে ঠিকই, কিন্তু তাদের মিলিয়ে মিশিয়ে যদি নির্দিষ্ট ডোজে ব্যবহার করা হয়, তাহলে এদের ক্ষমতা হবে দেখার মতো। তখন কোষের পুনর্গঠন, কোষ বৃদ্ধি ও বিভাজনে এরা মুখ্য ভূমিকা নেবে।
এটা ছাড়াও আরও কিছু কাজ করবে, যেমন— অতিরিক্ত ক্যালোরি জমতে দেবে না শরীরে। কড়া ডায়েট বা ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ের মতো দীর্ঘক্ষণের উপোস না করেও ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
জিনবিদ্যার সাহায্যে ক্রোমোজোমের অদলবদল ঘটিয়ে বার্ধক্যকে থামিয়ে দেওয়ার কৌশল নিয়ে গবেষণা চলছে। মানুষের শরীরে প্রতি ১০ বছর অন্তর হার্ট, লিভার, কিডনি ও ফুসফুসের কার্যক্ষমতা ৫-১০ শতাংশ হারে কমতে থাকে।
সাধারণত ৩০ বছরের পর থেকেই এই ক্ষয়ের প্রক্রিয়া শুরু হয়। তাই দেখা যায়, ৫০ বছরে গিয়ে হয়তো শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর ক্ষমতা প্রায় ২০ শতাংশ কমে গেছে। এর কারণ হলো— কোষের ক্ষয় ক্রমাগতই হয়ে চলেছে। কোষের মূল জিনগত উপাদান হলো ক্রোমোজোম, যা দেখতে ‘এক্স’-অক্ষরের মতো।
আর দুটি বাহু, ছোটটির শেষ প্রান্তকে বলে টেলোমিয়ার। ক্ষয়টা হয় এখানেই। কোষ কতবার বিভাজিত হবে তার হিসাব আছে বৈকি। যখন বিভাজন প্রক্রিয়া একেবারেই বন্ধ হয়ে যাবে, তখনই কোষের মৃত্যু হবে।
গবেষকরা দাবি করে বলেছেন, ওষুধ দুটির কাজ শুরু হবে সেখান থেকেই। কোষের ক্ষয় থামিয়ে দিয়ে নতুন কোষের পুনর্গঠনে এরা সাহায্য করবে। আর যদি কোষের ক্ষয় না হয়েই থাকে, তাহলে বুড়ো হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বছরের পর বছর শরীরের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গই সচল ও সক্রিয় থাকবে। চনমন করবে শরীরের সব কোষ। স্বাভাবিক নিয়মেই বৃদ্ধি পাবে আয়ু।