ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে নিয়ে আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ডা. মাহমুদা মিতু।
ডা. মাহমুদা মিতু লিখেছেন, ‘এখন পর্যন্ত হাদি অ্যাসিস্ট্যান্ট ভেন্টিলেশনে, তার মানে সে নিজে থেকে শ্বাস নিচ্ছে ব্যাপারটা এমন নয়। সে নিজে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করছে আর মেশিন সেই শ্বাসকে সাপোর্ট দিচ্ছে। ২টা ৪৪-এ বাসা থেকে বের হইছিলাম।
জাস্ট এক সেকেন্ডে দৌড় দিছি একটা ব্যাটারি রিকশা নিয়ে। এক ইঞ্চি জ্যাম ছিল না, তার পরও মনে হচ্ছিল মালিবাগ থেকে ঢাকা মেডিক্যাল যেন হাজার মাইল, রাস্তা যেন শেষ হচ্ছে না। সেই থেকে হাদির সাথেই গিয়ে দেখি কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট অলরেডি সিপিআর দিয়েও রেগুলার পালস পায় আসেনি তখন। পিপল মিড ডায়েলেট দেখেছি।
তারপর জাহিদ স্যার আহাদসহ নিউরোলজি, ইএনটি, থোরাসিক সব টিম এলো, ওটি হলো, এর মাঝখানে অনেক কিছু।
তিনি আরো লিখেছেন, হাদির স্কালের একসাইডের হাড় খুলে ডিকম্প্রেশন করার সাথে সাথেই স্পন্টেনিয়াস শ্বাস নেওয়া প্রথমে শুরু করে, ব্রেইনের ভেতরে রক্তক্ষরণ হয়ে ভেতরের চাপে ব্রেইন টাইট হয়ে ছিল। তারপর আরো কথা লিখতে ইচ্ছা করছে না। সব লেখা উচিতও না হয়তো।
(কাল থেকে শত শত মানুষ আমাকে ফোন দিয়েছেন আপডেট জানার জন্য।) তারপর হাদিকে প্রোটোকলসহ এভাকেয়ারে নেওয়া হচ্ছিল। আমি আহাদ, জারা সালমান সামনের গাড়িতে, পেছনে অ্যাম্বুল্যান্স আমি কাউকে বোঝাতে পারব না ওই মুহূর্ত আমার কেমন লাগছিল। জারা বারবার আমাকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করছে, কিন্তু বারবার মনে মনে বলছিলাম, কিরে ভাই এমপি হওয়ার আগেই ভিআইপি প্রোটোকল? এভাবে সবাইকে হারিয়ে দিলি? হাদি দেখ, তোরে প্রোটোকল দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, হাদি দেখ তোর জন্য বাংলাদেশের রাস্তা খালি করে রাখা হইছে যাতে এক সেকেন্ড জ্যাম না লাগে, হাদি তুই তো এমপি-মন্ত্রীর চেয়েও অনেক বড়। ভিআইপিদের জন্য যখন রাস্তা খালি করা হয় মানুষ গালাগালি করে তোর জন্য হাজার হাজার মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে পড়ে থাকতে রাজি আছে হাসিমুখে।
এনসিপির এই নেত্রী লিখেছেন, হাসপাতালের দুই পাশে অ্যাম্বুল্যান্স বের হওয়ার সময় যেভাবে আল্লাহ হু আকবর ধ্বনি আসছিল। আমি কী লিখছি জানি না আমার দুনিয়া অন্ধকার হয়ে গেল। ২৪ নভেম্বর দেখা হলো, কী দরদ মিতু আপুর প্রতি। আমি সেদিন নান্নু ভাইর জন্য খাবার কিনছিলাম, ওরে দুইটা মোমো কেন খাওয়াইলাম না। আমাদের এত তাড়া থাকে কেন? ওর কানে কানে একটা কথাও বলছিলাম। আমার বর হাদিকে টাকা পাঠাতে চাইল, আর পাঠানো হলো না কেন? আমাদের এত কিসের তাড়া?
তিনি লিখেছেন, মেয়েরা স্কুলের সামনে হাদিকে দেখছে, ছোট মেয়েটা বলছিল আমি বড় হলে হাদিকে ভোট দেব, আমি এই কথা ওরে জানাই নাই। মানুষ মরণাপন্ন হলেই আমাদের এত মায়া জেগে ওঠে, এর আগে কেন মনে রাখি না, কেন মনে রাখি না আমরা কেউ থাকব না আজীবন? ওর প্রোফাইলে আমার ছবিটা আমার পুরো পৃথিবী অন্ধকার করে দিয়ে গেল। আল্লাহ আমার সমস্ত শক্তি শেষ…। বাংলাদেশের লাল পতাকাটার মাঝে একটা গুলি করে গেল।
সব শেষে মাহমুদা মিতু লিখেছেন, আমি বোধ হয় আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারব না। পাশে তো অনেকগুলো খাওয়ার স্টল ছিল, আমার এখন কেন মনে পড়ল? তোরে আমি কিছু খাইতে সাধি নাই কেন? বাসায় গিয়েই আবার ছবিটা আপলোড দিলি… আমার মাথা আর কাজ করছে না।
প্রসঙ্গত, ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি নির্বাচনী প্রচারণাকালে রাজধানীতে শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। এরপর অপারেশন শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়।