ঘিওরে ৮ লাখ টাকায় ধ.র্ষণের ঘটনা ধামাচাপা!

মানিকগঞ্জের ঘিওরে ৮ লাখ টাকায় বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী এক কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম ৫ লাখ টাকা নিয়েছেন। আর ধর্ষণের শিকার প্রতিবন্ধী কিশোরীর পরিবারকে ৩ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে।

জানা যায়, চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি ঘিওর উপজেলার জাবরা গ্রামে এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়। এ ঘটনায় ওই দিনই শিল্পী আক্তার নামে এক নারীকে আটক করে পুলিশ। আটক শিল্পী আক্তার নিজেই ওই কিশোরীকে যৌন নিপীড়ন করেছেন বলে স্বীকার করেন। এরপর শিল্পী আক্তারের পরিবারের লোকজন ও স্থানীয় প্রভাবশালীরা বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মিমাংসার প্রস্তাব দেন।

এতে শিল্পী আক্তারকে ছাড়াতে বড় অংকের অর্থ দাবি করেন ঘিওর থানার ওসি মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। দর কষাকষি শেষে জাবরা গ্রামের মুক্তার ভূঁইয়ার ছেলে রাকিব ভূঁইয়ার মাধ্যমে ওসিকে ৫ লাখ টাকা ঘুস দিলে পরদিন ৫ ফেব্রুয়ারি রাত ১০ টার দিকে শিল্পী আক্তারকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

বিষয়টি নিয়ে ৬ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় প্রভাবশালীরা ভুক্তভোগীর বাড়িতে সালিশী মিমাংসা করে শিল্পী আক্তারকে ৩ লাখ টাকা জারিমানা করে। ধর্ষণের শিকার কিশোরীর মা-বাবা জানান, মিমাংসাকারীদের মধ্যে ছিলেন স্থানীয় মাতবর ইলু খান, হাবিব ভূঁইয়া, মনি ভূঁইয়া, হাকিম, হাসিন, রউফ ও বাদী-বিবাদী দুই পরিবারের সদস্যরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ধর্ষণের শিকার কিশোরীর মা অভিযোগে উল্লেখ করেন শিল্পী আক্তারের সহযোগীতায় অজ্ঞাত এক ব্যক্তি তার প্রতিবন্ধী মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। কিন্তু আটকের পর শিল্পী আক্তার দাবি করেন, অন্য কেউ নন, বরং তিনি নিজেই ওই প্রতিবন্ধীকে যৌন নিপীড়ন করেছেন। এর মাধ্যমে মূলত প্রকৃত আসামীকে আড়াল করার চেষ্টা করেন তিনি।

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হুমায়ুন কবির বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর ওসির প্রথম দায়িত্ব আলমত সংগ্রহ করা, ভুক্তভোগীর মেডিকেল পরীক্ষা করানো এবং ২২ ধারায় জবানবন্দী নেওয়া। তবে এ রকম ঘটনা সালিশে মিমাংসার কোন সুযোগ নেই।

সালিশ-মিমাংসার বিষয়ে জানতে চাইলে গ্রাম্য মাতবর ইলু খান বলেন, মেয়েটাকে নিয়ে একটা ঝামেলা হয়েছিল। এক মাস আগে এলাকায় বসে ঘটনার মিমাংসা করা হয়েছে।

ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ হয়েছিল। অভিযোগটি আমলযোগ্য মনে না হওয়ায় মামলা রুজু করা হয়নি। পরবর্তীতে অভিযোগকারী অভিযোগ প্রত্যাহার করে স্থানীয়ভাবে মিমাংসা করেছে।

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মোছা. ইয়াসমিন খাতুনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে তার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *