
গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটির সমস্যা এখন ঘরে ঘরে। ছোট-বড় সবাই কোনো না কোনোভাবে এই অস্বস্তিকর সমস্যার শিকার। মূলত অতিরিক্ত তেল-ঝালযুক্ত খাবার, অনিয়মিত খাবার খাওয়া এবং স্ট্রেসের কারণে এই সমস্যা দেখা দেয়। সময়মতো সচেতন না হলে গ্যাস্ট্রিক পরবর্তীতে আলসারের মতো জটিল রোগেও রূপ নিতে পারে। অনেকেই সাময়িক স্বস্তির জন্য ওষুধের আশ্রয় নেন, কিন্তু এর দীর্ঘমেয়াদী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। তাই গ্যাস্ট্রিক দূর করতে ও প্রতিরোধে ভরসা রাখতে হবে প্রাকৃতিক ও সহজলভ্য খাবারের ওপর।
আদা:আদা গ্যাস্ট্রিক প্রতিরোধে একটি অতি প্রাচীন ও কার্যকরী ঘরোয়া উপাদান। এতে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা পেটের গ্যাস কমায়। পেট ফাঁপা বা গ্যাসের সময় আদা কুচি করে লবণ দিয়ে খেলে দ্রুত আরাম পাওয়া যায়।
দই:দইয়ে থাকে উপকারী ব্যাকটেরিয়া যেমন ল্যাকটোব্যাকিলাস ও অ্যাসিডোফিলাস। এগুলো হজমে সহায়ক এবং পেটের খারাপ ব্যাকটেরিয়াগুলো ধ্বংস করে। নিয়মিত খাবারের পর এক বাটি দই খেলে গ্যাস্ট্রিক দূর হবে সহজেই।
রসুন:রসুন অ্যাসিডিটির সমস্যা কমাতে দারুণ কার্যকর। প্রতিদিন সকালে একটি রসুন চিবিয়ে খেলে পাকস্থলীর অ্যাসিড ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণে থাকে, ফলে গ্যাসজনিত সমস্যা কমে আসে।
পুদিনা পাতার পানি:গরম পানিতে পুদিনা পাতা ফুটিয়ে খেলে বমিভাব, পেট ফাঁপা এবং গ্যাসের সমস্যা দ্রুত উপশম হয়। এটি প্রাকৃতিক হজম শক্তি বৃদ্ধিকারী উপাদান।
পানি:খালি পেটে দুই গ্লাস পানি পান করা গ্যাস্ট্রিক প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর। এটি হজমে সহায়তা করে এবং পাকস্থলী পরিষ্কার রাখে।
পেঁপে:পেঁপেতে থাকা পেপেইন নামক এনজাইম হজম শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। যারা নিয়মিত পেঁপে খান, তাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা তুলনামূলকভাবে কম থাকে।
কলা:কলা হজম প্রক্রিয়ায় সহায়ক এবং শরীরে সোডিয়াম-পটাশিয়ামের ভারসাম্য বজায় রাখে। ফলে গ্যাস এবং বদহজম দূর হয় সহজেই।
শসা:শসায় থাকা অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান পেট ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে এবং গ্যাস কমায়। গ্রীষ্মকালে এটি বিশেষ উপকারী।
আনারস:আনারসে রয়েছে ৮৫ শতাংশ পানি এবং ব্রোমেলিন নামক হজম সহায়ক এনজাইম। এটি পরিপাকতন্ত্র পরিষ্কার রাখতে এবং গ্যাস্ট্রিক প্রতিরোধে সাহায্য করে।
হলুদ:হলুদ চর্বিযুক্ত খাবার হজম করতে সাহায্য করে এবং গ্যাস্ট্রিক প্রতিরোধে কাজ করে। এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে আধা চা চামচ হলুদ মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
ডাবের পানি:ডাবের পানিতে থাকা ফাইবার হজমশক্তি বাড়ায় এবং অ্যাসিডিটির সমস্যা কমায়। বুক জ্বালা বা পেটে ব্যথা হলে এটি খুব দ্রুত কাজ করে।
গ্যাস্ট্রিক প্রতিরোধে শুধু ওষুধ নয়, প্রয়োজন জীবনধারার পরিবর্তন ও খাদ্যাভ্যাসে সচেতনতা। উপরোক্ত খাবারগুলো প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখলে গ্যাস্ট্রিক থেকে স্থায়ী মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তবে সেই সঙ্গে ঝাল, ভাজা-পোড়া ও প্রসেসড ফুড যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে।