হঠাৎ যে ঘোষণা দিলেন সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ-জামান!

যখন পৃথিবী শান্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী যেন এক আলোকবর্তিকা। আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবসে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত বিশেষ সংবর্ধনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান আবেগ ও অহংকারের সঙ্গে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অমর চেতনা ও সংবিধানের নির্দেশনাই আমাদের শান্তির মূল শক্তি।

তিনি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন জাতিসংঘ মিশনে প্রাণ উৎসর্গ করা ১৬৮ জন বীর শহীদ শান্তিরক্ষীর আত্মত্যাগকে, যাদের বলিদান আজও দেশের প্রতিটি কোণে গৌরবের আলো ছড়ায়। “তাদের স্মৃতিই আমাদের পথপ্রদর্শক, আমাদের অনুপ্রেরণা,” যোগ করেন তিনি।

১৯৮৮ সাল থেকে শুরু হওয়া বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের যাত্রা আজ পর্যন্ত অবিচলিত। বিশ্বের নয়টি মিশনে প্রায় ৫,৫১৮ জন সেনা, নৌ, বিমান ও পুলিশ সদস্য দেশের নীল, সবুজ পতাকা গর্বের সঙ্গে বহন করছেন। প্রশিক্ষণ, নৈতিকতা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে তারা প্রতিনিয়ত নিঃস্বার্থভাবে দায়িত্ব পালন করছে, যেখানে ৩,৬৪৫ নারী সদস্য ইতোমধ্যেই সফলতার সোনালি অধ্যায় লিখেছেন এবং বর্তমানে ৪৪৪ নারী শান্তিরক্ষী সাহসিকতার নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করছেন।

সেনাপ্রধান গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করেন, সম্প্রতি কঙ্গোতে মোতায়েনকৃত বাংলাদেশি হেলিকপ্টার কন্টিনজেন্ট এক নতুন শক্তির প্রতীক। পাশাপাশি পেরু সেনাবাহিনীকে বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় সরঞ্জামের অনুদান এবং সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে পরিচালিত কমিউনিটি ক্লিনিক স্থানীয় মানুষের সেবা নিশ্চিত করছে—যেখানে দেশটির প্রেসিডেন্ট ও সেনাপ্রধান ক্লিনিক উদ্বোধনে উপস্থিত থেকে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

বিদেশি কূটনীতিক ও অতিথিদের উদ্দেশে ইংরেজিতে ভাষণকালে তিনি জানান, “আমাদের চেতনা আসলে সেই মহান মুক্তিযুদ্ধের আত্মত্যাগ ও সংবিধানের আদর্শ থেকে উদ্ভূত। জাতিসংঘের প্রত্যেক আহ্বানে আমরা সাহসের সঙ্গে সাড়া দিয়ে বিশ্ব শান্তির অঙ্গীকারে অটল রয়েছি এবং ভবিষ্যতেও থাকব।”

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস, ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব মো. রুহুল আলম সিদ্দিকী, তিন বাহিনীর প্রধান, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, জাতিসংঘের ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম নিয়ে বিশেষ উপস্থাপনা হয় এবং ভিডিও কনফারেন্সে সরাসরি শান্তিরক্ষীদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়।

এই দিবস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, শান্তি রক্ষার জন্য বাংলাদেশের সেনাবাহিনী শুধু অস্ত্রধারী নয়, বরং মানবতার মিশন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, যেখানে আত্মত্যাগ, সাহস ও নিঃস্বার্থতা এক নতুন বিশ্ব গড়ার শপথ দিচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের সেই চেতনা থেকে অনুপ্রাণিত বাংলাদেশ আজ শান্তির অগ্রদূত হিসেবে বিশ্ব দরবারে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

FAQ (প্রশ্ন ও উত্তর)
প্রশ্ন ১:জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবসে বাংলাদেশ সেনাপ্রধান কী বলেছেন?
উত্তর: সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের আত্মত্যাগ ও সংবিধানের আদর্শ থেকেই বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা মিশনের শক্তি এসেছে এবং বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তির অঙ্গীকারে অটল।
প্রশ্ন ২:বাংলাদেশ কতদিন ধরে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিচ্ছে?

উত্তর: বাংলাদেশ ১৯৮৮ সাল থেকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে।
প্রশ্ন ৩:বর্তমানে কতজন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বিভিন্ন মিশনে নিয়োজিত?

উত্তর: বর্তমানে প্রায় ৫,৫১৮ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী ৯টি দেশের মিশনে দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রশ্ন ৪:বাংলাদেশি নারীরা শান্তিরক্ষা মিশনে কতটা ভূমিকা রাখছে?

উত্তর: ইতোমধ্যে ৩,৬৪৫ নারী শান্তিরক্ষী সফলভাবে কাজ করেছেন, আর বর্তমানে ৪৪৪ জন নারী সদস্য সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *