
আজ ৫ আগস্ট, যা ইতিহাসে ‘৩৬ জুলাই’ নামে পরিচিত, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের এক ঐতিহাসিক দিন হিসেবে স্মরণ করা হচ্ছে। দীর্ঘ একমাসের গণআন্দোলনের পর এই দিনেই অবসান ঘটে আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের। হাজারো মানুষ ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির আওতায় রাজপথে নেমে আসেন, আর জনগণের দৃঢ় আন্দোলনের সামনে মাথা নত করে দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগে বাধ্য হন।
এই দিনকে কেন্দ্র করে আজ দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’। নানা কর্মসূচি ও আলোচনার মধ্য দিয়ে দেশের মানুষ স্মরণ করছে সেই অবিস্মরণীয় ঐতিহাসিক মুহূর্তকে।
এ উপলক্ষে দেশের অন্যতম আলোচিত ইসলামি বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারী তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি বিস্তারিত পোস্ট প্রকাশ করেছেন। সেখানে তিনি ‘৩৬শে জুলাই’-কে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি মোড় ঘোরানো দিন হিসেবে অভিহিত করেছেন।
তিনি লিখেন, গত বছরের এই দিনটিতে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ এক জুলুমের শাসন ‘স্থগিত’ হয়।
ড. আজহারী অভ্যুত্থান-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার সম্পর্কে বলেন, দেশের টালমাটাল অর্থনীতিকে যেভাবে সামাল দেয়া হয়েছে, তাতে এই সরকার সত্যিকার অর্থেই প্রশংসার দাবিদার। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালে রাখার চেষ্টা তারা করেছে।
তিনি বলেন, ইউনূস সরকার সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু করেছে, যা ভবিষ্যৎ-বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত জরুরি ছিল। তবে কোনো গুরুত্বপূর্ণ খাত বাদ পড়েছে কি-না, সেটি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
তিনি বিভিন্ন কমিশনের বিতর্কিত প্রতিবেদনের পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানিয়ে বলেন, একটি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মূল্যবোধকে অগ্রাহ্য করে কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়। প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে ভবিষ্যতে যেন কোনো ফ্যাসিবাদী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
ড. আজহারী দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি উদার ও প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতির চর্চার আহ্বান জানিয়ে লেখেন, দেশের মানুষ আর হানাহানি, বিভক্তি চায় না। স্থিতিশীল একটি রাজনৈতিক পরিবেশ দেশের অগ্রগতির জন্য অত্যন্ত জরুরি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনচেতা ও শান্তিপ্রিয়। তারা চায়, নিজেদের বিশ্বাস ও আদর্শ নিয়ে নির্বিঘ্নে জীবনযাপন করতে। কোনো বৈদেশিক শক্তির আঞ্চলিক শাখা হয়ে থাকতে তারা চায় না।
তিনি প্রত্যাশা করেন, প্রতিটি মানুষ যেন যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ পান, এবং নিরাপদ ও বৈষম্যহীন জীবন যাপন করতে পারেন।
পোস্টের শেষাংশে ড. আজহারী মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করে লেখেন, তিনি যেন আমাদের যোগ্য ও ন্যায়পরায়ণ শাসক উপহার দেন, দুর্নীতিমুক্ত ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলার শক্তি দেন।
তিনি আরও বলেন, আসুন, ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্যাসিবাদ, আধিপত্যবাদ আর জুলুমের চির অবসান ঘটিয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাই ইনশাআল্লাহ।