
বাংলাদেশে জমির মালিকানা নিয়ে জটিলতা ও দীর্ঘস্থায়ী মামলা দীর্ঘদিনের সমস্যা। তবে ২০২৫ সালে এসে এই জটিলতা হ্রাসে সরকার ভূমি ব্যবস্থাপনায় এনেছে কিছু যুগান্তকারী পরিবর্তন। এখন থেকে জমির প্রকৃত মালিকানা প্রমাণে তিনটি নির্দিষ্ট প্রমাণপত্র থাকলেই আইনি মালিক হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া যাবে।
জমির মালিকানা প্রমাণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি দলিল:
১. রেজিস্ট্রার্ড দলিল (Registered Deed):
জমি হস্তান্তরের প্রাথমিক ও প্রধান দলিল হলো রেজিস্ট্রার্ড দলিল, যা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে রেজিস্ট্রির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এটি ছাড়া কেউ মালিকানা দাবি করতে পারবে না (উত্তরাধিকার ছাড়া)। ২০২৫ সালে সরকার দলিল যাচাইয়ের জন্য ডিজিটাল ভেরিফিকেশন সিস্টেম চালু করেছে।
২. নামজারি খতিয়ান/মিউটেশন কপি:
দলিলের পর অবশ্যই নামজারি করতে হবে, যা সরকারি রেকর্ডে মালিকানা আনুষ্ঠানিকভাবে নথিভুক্ত করে। খতিয়ান ছাড়া দলিল থাকার পরেও প্রশাসনিক স্বীকৃতি পাওয়া সম্ভব নয়।
৩. পরিশোধিত খাজনার দাখিলা/রসিদ:
এটি প্রমাণ করে মালিক সরকারকে নিয়মিত ভূমি কর প্রদান করছেন। খাজনা না দিলে সরকার জমিকে বেহাত সম্পত্তি হিসেবে চিহ্নিত করতে পারে। অনলাইনে খাজনা দিতে ও দাখিলা সংগ্রহ করা যায়: https://etax.land.gov.bd
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নথি ও তথ্য:
খতিয়ান (CS, SA, RS, BS):
জমির ইতিহাস সংরক্ষণের সরকারি রেকর্ড। সর্বশেষ ও হালনাগাদ জরিপ হচ্ছে BS খতিয়ান।
Dag ও Khatian নম্বর:
দলিল ও খতিয়ানে দাগ নম্বর মিলে গেলে মালিকানা নিশ্চিত হয়।
Records of Rights (RoR):
আধুনিক ডিজিটাল রেকর্ড যেখানে মালিকানা, জমির শ্রেণি, আয়তনসহ নানা তথ্য থাকে।
অনলাইন ভূমি সেবা (২০২৫):
১. নামজারি আবেদন: https://land.gov.bd
২. খাজনা পরিশোধ: https://etax.land.gov.bd
৩. খতিয়ান ও ম্যাপ দেখুন: https://www.eporcha.gov.bd
৪. ভূমি তথ্য অ্যাপ: “Land Info BD” (প্লে স্টোরে পাওয়া যাবে)
সবচেয়ে বেশি ভুল হয় যেসব জায়গায়:
শুধুমাত্র খতিয়ান বা দলিল থাকলেই মালিকানা প্রমাণ হয় না
নামজারি না করলে আইনগত মালিকানা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে
খাজনা না দিলে সরকারি দখল হতে পারে
ভুল দাগ বা নাম থাকলে মামলা বা বিরোধ হতে পারে
বিশেষ পরামর্শ:
দলিল, খতিয়ান ও খাজনার দাখিলা সংরক্ষণ করুন
জমি কেনার আগে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যাচাই করুন
দালাল না দিয়ে নিজেই অনলাইন সেবা গ্রহণ করুন
পরিবারে লিখিত সম্পত্তি চুক্তি করে রাখলে ভবিষ্যৎ বিরোধ এড়ানো সম্ভব
২০২৫ সালে হালনাগাদ করা ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিকা অনুসারে, জমির প্রকৃত মালিকানার দাবিতে এই তিনটি দলিলই যথেষ্ট। সরকার ভূমি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটালাইজেশন ও স্বচ্ছতা বাড়াতে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তা জনসাধারণের জন্য আশার আলো হয়ে উঠেছে।