মাত্র দুই মিনিটেই সড়ক ক্লিয়ার করে চক্রান্ত নস্যাৎ

দেশে কোথাও ‘পান থেকে চুন খসলেই’ তাকে ইস্যু বানিয়ে প্রায়ই রাস্তা অবরোধ করতে দেখা যাচ্ছে পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের। সম্প্রতি এমন বহু ঘটনায় অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে সাধারণ জনগণকে। পুলিশ-প্রশাসন ‘দাবি-দাওয়া লীগ’ খ্যাত এই সড়ক অবরোধকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিতে পারায় ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পোশাক শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ব্যানারে সড়কে চলমান বিশৃঙ্খলার পেছনে ভারত ও পতিত স্বৈরাচারের ইন্ধন রয়েছে। তারা একটি শক্তিশালী চক্র গড়ে তুলে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে উঠে পড়ে লেগেছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে বিভিন্ন রূপে ফেরার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেও তাদের কুটচাল ও ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে গেল সাত মাসে দুই শতাধিক আন্দোলন মোকাবেলা করতে হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারকে।

এমনই এক পরিস্থিতিতে দাবি-দাওয়ার নামে মহাসড়ক অবরোধকারীদের ৭ মিনিটের আল্টিমেটাম দিয়ে সরিয়ে দেয় দেশপ্রেমিক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা। ফলে রমজান মাসে সীমাহীন দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পান হাজার হাজার পথচারী। শ্রমিক নামধারীদের চক্রান্ত নস্যাৎ করে সাধারণ জনগণকে স্বস্তি দেয়ায় প্রশংসায় ভাসছে সেনাবাহিনী। দেশে যখনই কোনো সঙ্কট দেখা দিয়েছে তখনই বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে সেনাবাহিনী। সামনে যেকোনো চক্রান্ত ও বিশৃঙ্খলা মোকাবেলায় বাহিনীটির বলিষ্ঠ এমন ভূমিকা দেখতে চান নেটাগরিকরা।

খবরে বলা হয়, গাজীপুরের তেলিপাড়া এলাকায় শুক্রবার দুপুরে বিভিন্ন দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছিলেন একটি কারখানার শ্রমিকরা। দীর্ঘ সময় ধরে সড়ক অবরোধ থাকার পর ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী এসে শ্রমিকদের ৭ মিনিটের আল্টিমেটাম দেয়। সেনাবাহিনীর ঘোষণার পর ২ মিনিটের মধ্যে শ্রমিকরা সড়ক থেকে সরে যান।

হ্যান্ড মাইকে এক সেনা কর্মকর্তা ঘোষণা করেন, ‘আপনাদের দাবিগুলো নিয়ে নেগোসিয়েশন চলছে এবং তা চলবে।এতে কোনো সমস্যা নেই। যদি ফ্যাক্টরির ভেতরে মালিক ও শ্রমিকের কোনো অমিল থাকে, তবে সেটা নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সমাধান হবে। তবে গতকালই শ্রম মন্ত্রণালয় এবং আইজিপি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে, এখন থেকে কোনো রোড ব্লক গ্রাহ্য করা হবে না। রোড ব্লক এবং জনভোগান্তি এক পানিশেবল ক্রাইম।

ওই সেনা কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘আপনার জন্য সময় দেওয়া হচ্ছে ৭ মিনিট। ৭ মিনিটের মধ্যে আপনাদের সাইডে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। যদি সড়ক না ছাড়েন, তাহলে আপনার দাবির ব্যাপারে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তবে আগে রাস্তা ক্লিয়ার করতে হবে। আমি পরিষ্কার বলছি, ৭ মিনিটের মধ্যে রাস্তা না ছাড়লে তা আদেশ ভঙ্গ হবে এবং জনভোগান্তি সৃষ্টি করার জন্য আপনাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সেনা কর্মকর্তার ওই বক্তব্যের পর মাত্র ২ মিনিটের মধ্যে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করে সরে যান। পরে ওই এলাকায় পরিবহন ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয় এবং শ্রমিকদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে তাদের দাবির কিছু সমাধানও হয়েছে বলে জানা যায়।

সেনাবাহিনীর দৃঢ়চিত্ত এমন ভূমিকার কারণে শ্রমিক নামধারী দুষ্কৃতিকারীদের দ্রুতই রুখে দেয়া সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন সচেতন মহল। নাহলে রমজান মাসে ব্যাপক দুর্ভোগে পড়তে হতো পথচারীদের। সেনাবাহিনী কঠোর হলে রাতারাতি দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নাটকীয় উন্নতি হওয়া সম্ভব। দুষ্কৃতিকারীদের কোনো ছাড় না দিয়ে এখন থেকে বিশৃঙ্খলা দমনে সেনাবাহিনীর এমন শক্ত ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন নেটিজেনরা।

ফেসবুকে মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান নয়ন লিখেছেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ সেনাবাহিনীর এই রূপটাই দেখতে চায়। সেনাবাহিনীর ৭ মিনিটের আল্টিমেটাম অবরোধ প্রত্যাহার ১ মিনিটেই। এখন থেকে রাস্তা অবরোধ করে কেউ যেন আর বিক্ষোভ করতে না পারে। খুব সুন্দর সমাধান, আন্দোলনে আন্দোলনে দেশ চলতে পারে না। সবাইকে সমাধানের পথে হাটতে হবে।

মালেক ব্যাপারী লিখেছেন, আমাদের সেনাবাহিনী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে দেশে বীরত্বের পরিচয় দিয়েছেন। চলমান দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র মোকাবেলায়ও জনগণের পাশে থেকে দৃঢ় ভূমিকা রেখে সবার হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। সেনাবাহিনী আমাদের গর্ব আমাদের প্রাণের বন্ধু। অনেক অনেক ধন্যবাদ বাংলাদেশ যৌথবাহিনীকে।

ওবাইদুর রহমান লিখেছেন, আর্মি এই আল্টিমেটাম ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজদের আর ধর্ষকদের দিলে তারাও একদিনের সোজা হইয়া যাইব। যারা তরুণ তারা ২০০৭-২০০৮ দেখেনি। তখন আর্মির পিডানির ডরে কোটি টাকা দামের গাড়ি ময়লার স্তূপে রাতের আঁধারে ফেলে দিয়ে আসছে গাড়ির মালিকরা। আবার খালেদা জিয়ার আমলে অপারেশন ক্লিন হার্টের সময়ও বাপ বাপ কইয়া সব হারামি লুকাইছিল।

মোঃ জয়নাল আবেদীন লিখেছেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের গর্বের বিষয়। দেরিতে হলেও সেনাবাহিনী তাদের ঐতিহ্য আবার ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। ফ্যাসিবাদের দোসররা যেভাবে উঠে পড়ে লেগেছে তাতে সেনাবাহিনী কার্যকর ভূমিকা না রাখলে আরও ভয়াবহ কিছু ঘটতে পারত। তাই ধন্যবাদ জানাচ্ছি সেনাবাহিনীর সকল সদস্যকে। এটাই প্রমাণ করে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী চাইলে দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পরিবর্তন হওয়া সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *