মস্তিষ্কে টিউমারের ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ৫টি সূক্ষ্ম উপসর্গ!

মস্তিষ্কে টিউমার মানেই শুধু ক্যানসার নয়। এটি মূলত মস্তিষ্ক বা তার আশপাশে অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধিকে বোঝায়। টিউমার দুটি ধরণের হতে পারে—ম্যালিগন্যান্ট বা ক্যানসারজনিত এবং বিনাইন বা নন-ক্যানসারজনিত। তবে ক্যানসার না হলেও টিউমার বড় হলে তা মস্তিষ্কের স্নায়ু, রক্তনালী বা টিস্যুর ওপর চাপ সৃষ্টি করে বিপজ্জনক প্রভাব ফেলতে পারে। টিউমারের ধরণ, অবস্থান ও আকারের ওপর নির্ভর করে শরীরে নানা রকম জটিলতা দেখা দেয়।

তাই প্রাথমিক পর্যায়ে এর লক্ষণগুলো চিনে ফেলা অত্যন্ত জরুরি। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নিউরোসার্জন ডা. জে জগন্নাথন জানিয়েছেন, অনেক সূক্ষ্ম উপসর্গ সাধারণত অবহেলিত হয়, অথচ এগুলো দ্রুত ধরা পড়লে চিকিৎসার ফলাফল অনেক ভালো হয়।

প্রাথমিক পর্যায়ে মস্তিষ্কে টিউমারের ৫টি সংকেত

ডা. জগন্নাথনের মতে, নিচের উপসর্গগুলোকে মানুষ সাধারণত ক্লান্তি, মানসিক চাপ কিংবা বয়সজনিত পরিবর্তন ভেবে এড়িয়ে যান। অথচ এগুলো হতে পারে মারাত্মক বিপদের সতর্ক সংকেত।

১. দীর্ঘস্থায়ী মাথাব্যথা:
সাধারণ মাথাব্যথা সবারই হয়, কিন্তু যদি মাথাব্যথা বারবার হয়, ক্রমেই বেড়ে যায় বা স্বাভাবিকের চেয়ে আলাদা মনে হয়, তবে তা উপেক্ষা করা উচিত নয়। এটি টিউমারের কারণে মস্তিষ্কে চাপ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিতে পারে।

২. দৃষ্টিশক্তির সমস্যা:
হঠাৎ ঝাপসা দেখা, ডাবল ভিশন বা পাশের দৃষ্টি হারিয়ে যাওয়া মস্তিষ্কে টিউমারের লক্ষণ হতে পারে। মস্তিষ্কের যে অংশ দৃষ্টিশক্তি নিয়ন্ত্রণ করে সেখানে চাপ পড়লে বা অপটিক নার্ভ আক্রান্ত হলে এ সমস্যা দেখা দেয়।

৩. স্মৃতিভ্রংশ বা মনোযোগের ঘাটতি:
অল্প কিছু ভুলে যাওয়া সাধারণ ব্যাপার হলেও যদি বারবার স্মৃতিভ্রংশ, মনোযোগের সমস্যা বা কথা বলার সময় শব্দ খুঁজে না পাওয়া দেখা দেয়, তবে তা উপেক্ষা করা বিপজ্জনক। এটি প্রাথমিকভাবে টিউমারের ইঙ্গিত হতে পারে।

৪. আচরণ বা মেজাজের পরিবর্তন:
হঠাৎ রাগান্বিত হওয়া, অতিরিক্ত হতাশা বা অস্বাভাবিক আচরণও টিউমারের লক্ষণ হতে পারে। মস্তিষ্কের যে অংশ আবেগ ও আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে সেখানে চাপ পড়লে এই পরিবর্তন ঘটে।

৫. খিঁচুনি, অসাড়তা বা ঝিনঝিনি ভাব:
যাদের আগে কখনও খিঁচুনি হয়নি, তাদের হঠাৎ খিঁচুনি শুরু হলে তা অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। শরীরের বিভিন্ন অংশে ঝিনঝিনি ভাব বা অসাড়তাও টিউমারের কারণে হতে পারে।

কেন হয় মস্তিষ্কে টিউমার?

টিউমারের পেছনে জেনেটিক, পরিবেশগত ও জীবনধারাগত নানা কারণ থাকতে পারে। কারও ক্ষেত্রে বংশগত জিনের ত্রুটি, কারও ক্ষেত্রে রেডিয়েশন এক্সপোজার বা ক্ষতিকর পরিবেশগত উপাদান ভূমিকা রাখে। তবে অনেক সময় কোনো স্পষ্ট কারণ ছাড়াও মস্তিষ্কে টিউমার তৈরি হতে পারে, যা নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে।

কীভাবে শনাক্ত করা হয় টিউমার?

প্রথমে স্নায়ুর কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখা হয়, এরপর এমআরআই বা সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে টিউমারের অবস্থান ও আকার চিহ্নিত করা হয়। অনেক সময় টিস্যুর বায়োপসি করে নিশ্চিত করা হয় টিউমারটি ক্যানসারজনিত নাকি নয়। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে চিকিৎসা পরিকল্পনা সহজ হয় এবং জটিলতার ঝুঁকি কমে যায়।

প্রতিরোধ সম্ভব কি?

সব মস্তিষ্কের টিউমার প্রতিরোধ করা সম্ভব না হলেও কিছু অভ্যাস ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। অপ্রয়োজনীয় রেডিয়েশন এড়িয়ে চলা, ক্ষতিকর পরিবেশ থেকে দূরে থাকা, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা, সুষম খাদ্যাভ্যাস ও পর্যাপ্ত ঘুম টিউমারের ঝুঁকি কমাতে কার্যকর হতে পারে।

সতর্ক থাকুন, সচেতন হোন

প্রাথমিক পর্যায়ে মস্তিষ্কে টিউমারের উপসর্গ সূক্ষ্ম হলেও অবহেলা করলে তা প্রাণঘাতী হতে পারে। মাথাব্যথা, দৃষ্টির সমস্যা, আচরণগত পরিবর্তন কিংবা খিঁচুনিকে অবহেলা করবেন না। সময়মতো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে গেলে জীবন বাঁচানো সম্ভব। আধুনিক চিকিৎসা ও সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমে অনেক রোগীই টিউমার নিয়ন্ত্রণে রেখে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। তাই সচেতনতা, সতর্কতা এবং প্রাথমিক পর্যায়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাই হতে পারে আপনার সুরক্ষার সবচেয়ে বড় আশ্রয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *