চোখের নিচের কালো দাগ কখন ভয়াবহ রোগের লক্ষণ? যা বলছে গবেষণা

চোখের নিচে কালো দাগ বা ‘ডার্ক সার্কেল’ এখন অনেকেরই সাধারণ সমস্যা। রাত জেগে কাজ করা, ক্লান্তি বা ঘুমের অভাবকে সাধারণত এর জন্য দায়ী করা হয়। তাই সচরাচর কেউ এটিকে খুব একটা গুরুত্ব দেন না। কিন্তু চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সবসময় বিষয়টি এতটা সহজ নয়। অনেক সময় পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়ার পরও যদি চোখের নিচে স্থায়ীভাবে কালো দাগ থেকে যায়, তবে সেটি শরীরের ভেতরে লুকিয়ে থাকা জটিল সমস্যার ইঙ্গিত বহন করতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে, কিডনি ও লিভারের কর্মহীনতা, দুর্বল রক্ত সঞ্চালন, হরমোনের পরিবর্তন কিংবা হজমের সমস্যার মতো কারণগুলোও চোখের নিচের কালো দাগের সঙ্গে সম্পর্কিত থাকতে পারে। অর্থাৎ, এটি শুধু ক্লান্তি বা অনিদ্রার প্রতিফলন নয়, অনেক সময় বড় কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকিরও বার্তা দিতে পারে।

কিডনির দুর্বলতা বা ফেইলিউর

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের এক গবেষণায় দেখা গেছে, চোখের নিচের কালো দাগ বা পেরিওরবিটাল হাইপারপিগমেন্টেশন কিডনির সমস্যার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত হতে পারে। কিডনি সঠিকভাবে কাজ না করলে শরীরে বিষাক্ত পদার্থ জমে যায়। এর ফলে চোখের চারপাশে তরল জমে থাকা ও রঙ পরিবর্তন হতে পারে, যা কালো দাগকে বাড়িয়ে তোলে। এছাড়া কিডনির দুর্বল কার্যকারিতার কারণে ত্বক শুষ্ক ও নিস্তেজ হয়ে যায়। তবে সব কালো দাগ যে কিডনির রোগের কারণে হয়, তা নয়। মানসিক চাপ, অতিরিক্ত পরিশ্রম বা অনিয়মিত ঘুমও সমানভাবে দায়ী হতে পারে। তাই কিডনির সুস্থতার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম ও চাপ নিয়ন্ত্রণ জরুরি।

লিভারের রোগ

চোখের নিচে কালো দাগ দীর্ঘস্থায়ী লিভারের সমস্যারও ইঙ্গিত হতে পারে। দুর্বল লিভার রক্ত থেকে বিষাক্ত উপাদান ফিল্টার করতে ব্যর্থ হয়, ফলে ত্বক ফ্যাকাশে ও নিস্তেজ হয়ে যায়। গবেষণা বলছে, লিভারের সমস্যায় আক্রান্ত প্রায় এক-পঞ্চমাংশ মানুষের চোখের নিচে কালো দাগ দেখা যায়। লিভার ফুলে যাওয়া বা চর্বি জমে যাওয়া অবস্থায় শরীরের বিপাকক্রিয়া ও টিস্যুতে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যাহত হয়, চোখ ক্লান্ত ও কালচে দেখায়। পাশাপাশি তরল ধরে রাখা, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা বা পুষ্টিহীনতা সমস্যাটিকে আরও বাড়িয়ে তোলে। এ ক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ (ডিম, মাছ, দুধজাত খাবার ইত্যাদি), অ্যালকোহল পরিহার ও সক্রিয় জীবনযাপন অত্যন্ত কার্যকর।

হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ও অনিয়মিত মাসিক

নারীদের ক্ষেত্রে অনিয়মিত মাসিক বা হরমোনের অসামঞ্জস্যও চোখের নিচে কালো দাগের কারণ হতে পারে। চিকিৎসকরা বলেন, এ ধরনের অবস্থায় রক্ত প্রবাহ ব্যাহত হয়, ফলে মুখের ত্বকে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ও পুষ্টি পৌঁছায় না। এর ফলে ত্বক নিস্তেজ হয়, চোখ ভেতরে ঢুকে যাওয়া বা ক্লান্ত ও বয়সের তুলনায় বেশি বয়স্ক দেখানোর প্রবণতা তৈরি হয়। মাসিকের সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। পাশাপাশি আয়রন, ভিটামিন বি১২ ও ফোলেটসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালন উন্নত করা যায়।

সমাধান কী?

চোখের নিচের কালো দাগের চিকিৎসা নির্ভর করে মূল কারণের ওপর। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জীবনযাত্রার উন্নয়ন বড় ভূমিকা রাখে। পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ, সুষম খাবার—সবই ত্বকের সুস্থতার জন্য জরুরি। ফলমূল, শাকসবজি, গোটা শস্য ও চর্বিহীন প্রোটিন গ্রহণ করলে ত্বক ও অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যকারিতা ভালো থাকে।

চিকিৎসকরা বলছেন, চোখের নিচে কালো দাগকে হালকাভাবে না দেখে প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ, এটি শুধু সৌন্দর্যগত সমস্যা নয়, কখনো কখনো ভয়াবহ রোগের আগাম সতর্কবার্তাও হতে পারে।

সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *